এনগঞ্জনিউজএক্সপ্রেস২৪ :
যুক্তরাজ্যের জ্যেষ্ঠ ট্রেজারি মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সদস্যদের সঙ্গে একাধিক সম্পত্তিতে বসবাস ও ভোগদখল করার অভিযোগ ওঠার পর তিনি নিজেকে মন্ত্রী পর্যায়ের মান পর্যবেক্ষণ সংস্থার কাছে সঁপে দিয়েছেন।
গতকাল সোমবার (৬ জানুয়ারি) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নগর ও দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক মন্ত্রীদের মানদণ্ড নির্ণয়বিষয়ক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাসকে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্ত করতে অনুরোধ করেছেন। বিশেষ করে, ব্রিটিশ মন্ত্রীদের জন্য নির্ধারিত নীতিমালা বা আচরণবিধি তিনি ভঙ্গ করেছেন কি না, তা দেখার অনুরোধ করেছেন।
টিউলিপ সিদ্দিক এমন এক সময়ে অনুরোধ করলেন, যখন তার বিরুদ্ধে তার খালা ও বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একাধিক সম্পত্তিতে বসবাস করার অভিযোগ উঠেছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর হাসিনা সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।
ম্যাগনাসের কাছে লেখা চিঠিতে টিউলিপ সিদ্দিক বলেন, ‘সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আমি আমার আর্থিক বিষয় এবং বাংলাদেশের সাবেক সরকারের সঙ্গে আমার পরিবারের সম্পর্ক নিয়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু হয়েছি, যার অধিকাংশই অসত্য। এ বিষয়ে আমার অবস্থান স্পষ্ট যে, আমি কিছু ভুল করিনি। তবে, সন্দেহ দূর করার জন্য আমি চাই আপনি স্বাধীনভাবে এই বিষয়গুলোর সত্যতা নির্ধারণ করুন।’
লেবার পার্টির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই সপ্তাহে অর্থমন্ত্রী তথা চ্যান্সেলর অব এক্সচেকার র্যাচেল রিভসের নেতৃত্বে ট্রেজারি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে চীনে ভ্রমণ করার কথা ছিল টিউলিপ সিদ্দিকের। কিন্তু তদন্তে সহায়তা করার জন্য তিনি চীন সফরে যাচ্ছেন না।
কিংস ক্রসের কাছে দুই বেডরুমের একটি ফ্ল্যাট এবং হ্যাম্পস্টেডে একটি পৃথক বাড়ির দখল ও মালিকানা ইস্যুতে সম্প্রতি টিউলিপ সিদ্দিক চাপের মধ্যে আছেন। শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) ফিনান্সিয়াল টাইমস এক প্রতিবেদনে জানায়, কিংস ক্রসের ফ্ল্যাটটি ২০০১ সালে ১ লাখ ৯৫ হাজার পাউন্ডে কিনেছিলেন আব্দুল মোতালিফ, যিনি হাসিনার দল আওয়ামী লীগের সদস্যদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত একজন ডেভেলপার ছিলেন। সিদ্দিক ২০০৪ সালে কোনো অর্থ প্রদান ছাড়াই সেই ফ্ল্যাটের মালিক হন।
ডেইলি মেইল জানিয়েছে, টিউলিপ আগে তাদের প্রতিবেদকদের জানিয়েছিলেন যে, ফ্ল্যাটটি তার বাবা-মা কিনে তাকে উপহার দিয়েছেন। পরে অভিযোগ ওঠে, তিনি মিথ্যা তথ্য দিয়ে পত্রিকাটিকে বিভ্রান্ত করেছিলেন।
দ্য সানডে টাইমস পরে জানায়, টিউলিপ হ্যাম্পস্টেডে একটি পৃথক সম্পত্তিতে বসবাস করেছেন। এই বাড়িটি কিনেছিলেন মইন গনি নামের এক আইনজীবী। এই আইনজীবী হাসিনা সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন এবং সম্পত্তিটি টিউলিপের বোনের কাছে হস্তান্তর করেছিলেন।
টিউলিপ বর্তমানে পূর্ব ফিঞ্চলে এলাকায় আবদুল করিম নামের এক ব্যক্তির ২১ লাখ পাউন্ড মূল্যের একটি বাড়ি ভাড়া নিয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখার কার্যনির্বাহী সদস্য।
শেখ হাসিনার পার্টি সঙ্গে টিউলিপের সংযোগ অতীতেও তার জন্য রাজনৈতিক সমস্যার কারণ হয়েছে। ২০১৭ সালে আহমদ বিন কাসেম নামে এক আইনজীবীর বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকার করেন টিউলিপ। ব্রিটেনে ব্যারিস্টারি পড়া আহমদ বিন কাসেম বাংলাদেশে কারাবন্দি ছিলেন।
তখন তিনি বলেছিলেন যে, তার খালার সরকারের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, ‘আমি হ্যাম্পস্টেড ও কিলবার্নের লেবার পার্টির এমপি, আমি একজন ব্রিটিশ এমপি। খুব সতর্ক থাকুন, আমি বাংলাদেশি নই এবং আপনি যার বিষয়ে কথা বলছেন, তার মামলার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।’
শেখ হাসিনা ছিলেন বিশ্বে দীর্ঘ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করা নারী সরকারপ্রধান। তার সরকারের বিরুদ্ধে প্রধান বিরোধীদল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপিসহ রাজনৈতিক ভিন্নমত দমন, ভুয়া নির্বাচন আয়োজনসহ নানা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আছে। গত বছরের জুলাইয়ে হাসিনার শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হলে তার সরকার সেটি বলপ্রয়োগের মাধ্যমে দমনের চেষ্টা করে। এতে প্রায় বহু মানুষ নিহত হয় এবং আহত হয় আরও কয়েক হাজার। পরে ৫ আগস্ট রাজধানীতে বিপুলসংখ্যক বিক্ষোভকারী তার সরকারি বাসভবনে ঢুকে পড়লে তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।
এখন পর্যন্ত টিউলিপ সিদ্দিক তার সম্পত্তি এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষ ব্যক্তিদের সঙ্গে সংযোগ নিয়ে প্রকাশিত তথ্যের পরও প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের আস্থা ও সমর্থন পাচ্ছেন। স্টারমার গত সোমবার বলেন, ‘মন্ত্রীদের মানদণ্ড নির্ধারণবিষয়ক উপদেষ্টার হাতে নিজেকে তুলে দেওয়ার মাধ্যমে টিউলিপ সিদ্দিক সঠিক কাজটি করেছেন।