এনগঞ্জনিউজএক্সপ্রেস২৪ :
রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন বলেছেন, তিনি শুনেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, কিন্তু তার কাছে এ সংক্রান্ত কোনো দালিলিক প্রমাণ বা নথিপত্র নেই।
মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
সাক্ষাৎকারটি শনিবার মানব জমিন পত্রিকাটির রাজনৈতিক ম্যাগাজিন সংস্করণ ‘জনতার চোখ’- এ প্রকাশিত হয়।
মতিউর রহমান চৌধুরীর মতে, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র যদি সত্যিই জমা দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে সেটির অনুলিপি কারও না কারও কাছে থাকার কথা। কিন্তু তিন সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন জায়গায় অনুসন্ধান চালালেও এর খোঁজ কেউ দিতে পারেনি তাকে। এমনকি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগেও যোগাযোগ করা হয়েছে, যেখানে সাধারণত প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র সংরক্ষিত থাকে। কিন্তু সেখানেও কিছু পাওয়া যায়নি। তাই শেষমেষ রাষ্ট্রপতির কাছেই সরাসরি এর উত্তর জানার সুযোগ মেলে।
৫ আগস্ট ছাত্র-আন্দোলন ও গণবিক্ষোভের মুখে দেশত্যাগ করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংবিধানের ৫৭ (ক) ধারা অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিতে হবে। কিন্তু রাষ্ট্রপতি জানিয়েছেন, তার কাছে শেখ হাসিনার কোনো পদত্যাগপত্র বা সংশ্লিষ্ট কোনো প্রমাণ পৌঁছায়নি।
জাতির উদ্দেশে ভাষণে যা বললেন রাষ্ট্রপতি
ঐতিহাসিক ৫ আগস্টে যা যা ঘটলো
রাষ্ট্রপতির ভাষ্যে, ‘আমি বহুবার পদত্যাগপত্র সংগ্রহের চেষ্টা করেছি, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি। হয়তো তার সময় হয়নি’।
সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি বলেন, ৫ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে বঙ্গভবনে ফোন আসে, যেখানে বলা হয়েছিল যে প্রধানমন্ত্রী প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য আসবেন। এরপরই বঙ্গভবনে প্রস্তুতি শুরু হয়। কিন্তু এক ঘণ্টার মধ্যে আরেকটি ফোন আসে যে তিনি (শেখ হাসিনা) আসছেন না।
তিনি বলেন, ‘চারদিকে অস্থিরতার খবর। কী হতে যাচ্ছে জানি না। আমি তো গুজবের ওপর নির্ভর করে বসে থাকতে পারি না। তাই সামরিক সচিব জেনারেল আদিলকে বললাম খোঁজ নিতে। তার কাছেও কোনো খবর নেই। আমরা অপেক্ষা করছি। টেলিভিশনের স্ক্রলও দেখছি। কোথাও কোনো খবর নেই। এক পর্যায়ে শুনলাম, তিনি দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। আমাকে কিছুই বলে গেলেন না।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার যখন বঙ্গভবনে এলেন তখন জানার চেষ্টা করেছি প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন কি না? একই জবাব। শুনেছি তিনি পদত্যাগ করেছেন। মনে হয় সে সময় পাননি জানানোর।’
তিনি বলেন, ‘সব কিছু যখন নিয়ন্ত্রণে এলো তখন একদিন মন্ত্রিপরিষদ সচিব এলেন পদত্যাগপত্রের কপি সংগ্রহ করতে। তাকে বললাম, আমিও খুঁজছি’।
আমার কাছে শেখ হাসিনার পদত্যাগের কোনো প্রমাণ নেই: রাষ্ট্রপতি
মতিউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে আলাপের এক পর্যায়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, এ বিষয়ে আর বিতর্কের সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রী চলে গেছেন এবং এটাই সত্য। তবুও এই প্রশ্নটি যাতে আর কখনও না ওঠে তা নিশ্চিত করতে আমি সুপ্রিম কোর্টের মতামত চেয়েছি।
রাষ্ট্রপতির পাঠানো রেফারেন্সের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ ৮ আগস্ট এ সম্পর্কে তাদের মতামত দেন। এতে বলা হয়, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাংবিধানিক শূন্যতা দূর করতে এবং নির্বাহী কার্যক্রম সুন্দরভাবে পরিচালনার উদ্দেশ্যে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠন করা যেতে পারে। প্রেসিডেন্ট অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টামণ্ডলীকে শপথবাক্য পাঠ করাতে পারবেন বলে আপিল বিভাগ মতামত দেন।
তবে গত ৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘প্রিয় দেশবাসী আসসালামু আলাইকুম, আপনারা জানেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং আমি তা গ্রহণ করেছি।’
কী ঘটেছিল ৫ আগস্ট?
সরকারের পদত্যাগের দাবিতে চলমান অসহযোগ আন্দোলন সফল করতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লং মার্চ টু ঢাকা ছিল সেদিন। এর আগে দুইদিনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে গড়ে ওঠা এই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। পুরো জুলাই মাসজুড়ে চলে এই আন্দোলন। একপর্যায়ে সরকার কোটা সংস্কার করে। তবে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রাণহানি ও সহিংসতার জেরে এক দফা দাবি উঠে শেখ হাসিনার পদত্যাগ। ৫ আগস্ট বেলা ১১টার পর থেকে ঢাকার পথে ঢল নামে মানুষের। কারফিউ ভঙ্গ করে বিভিন্ন স্থান থেকে আসতে শুরু করেন তারা। এক পর্যায়ে শাহবাগ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানের জেরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। সেদিন এএফপির খবরে বলা হয়েছিল, শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা গণভবন থেকে নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন। পরে জানা যায় তিনি ভারতে আছেন।