এনগঞ্জনিউজএক্সপ্রেস২৪ :
বিগত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের মতই যদি আদালত পুলিশ আইন ব্যবহার করে ক্ষেত্রবিশেষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কিছু নির্দোষ ব্যক্তিদের হয়রানি করার জন্য মিথ্যা গায়েবী মামলা দেয়া হয় তাহলে দেশে সামনে হয়তো জনমনে ক্ষোভ বাড়বে। শুধুমাত্র ভিন্নমত কিংবা ভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতাদর্শের কারনেই যদি নির্দোষ ব্যক্তিদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয় তাহলে এর পরিনতিও দায়ীদের ভোগ করতে হবে এবং এর পরিনতি হয়তো আরো বেশি ভয়াবহ হতে পারে। এই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গায়েবী মিথ্যা মামলায় আসামী করার সংস্কৃতি ও চর্চা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে।
২০১৮ সালে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক উপদেষ্টা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ড. তৈমুর আলম খন্দকারকে আসামী করায় এমন মন্তব্য করেছেন ড. তৈমূর আলম খন্দকার।
এক বিবৃতিতে তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতা আন্দোলনের পক্ষে আমি ছিলাম। গণমাধ্যমে আন্দোলনের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছি যা ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আছে। আন্দোলনে নিহত শিশুদের পক্ষে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে রীট পিটিশন দায়েরও করেছি। আন্দোলনে হেলিকপ্টার থেকে বাড়ির ছাঁদে, জানালার ফাঁক দিয়ে গুলিতে নিহত শিশুদের বিষয়ে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছি। আমি ছাত্র জনতার আন্দোলনের পক্ষে ছিলাম।
তিনি বলেছেন, ২০১৮ সালের ২২ জানুয়ারী বেসরকারি টেলিভিশন ইন্ডিপেনডেন্ট টিভির খালেদ মহিউদ্দীনের সঞ্চালনায় টকশোতে ছিলাম আমি ও শামীম ওসমান। ওইদিন টকশোতে সরকারের নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডের কঠোর সমালোচনা করেছিলাম। সেজন্য সে রাতে শামীম ওসমান আমাকে হুমকি দিয়ে বলেছিল, আওয়ামীলীগ সরকার কি জিনিস আপনি টের পাবেন। শামীম ওসমানের এমন হুমকির পরদিন ২৩ জানুয়ারী নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপি মনোনিত প্যানেলের পক্ষে প্রচারণায় আসলে কয়েক’শ পুলিশ তৎকালীন ফতুল্লা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামাল উদ্দীন, পরিদর্শক শাহজালাল মিয়ার নেতৃত্বে আমাকে টানাহেছড়া করে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। পুলিশ আমাকে সেদিন গলায় চিপ দিয়ে ধরেছিল। আমাকে নিম্ন আদালত জামিন দেয়নি। উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাই। অথচ ৮ ফেব্রুয়ারী বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার মামলায় কিভাবে আমাকে আসামী করা হয় বুঝে আসে না। আমি তখন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ছিলাম। এই ৫ আগস্টের পর বিএনপির কেউ আমার বিরুদ্ধে মামলা করেনি। যিনি মামলার বাদী তিনি আওয়ামীলীগের সঙ্গে সখ্যতা রেখে আওয়ামীলীগের দালালী করে আসছিল। আওয়ামীলীগের সঙ্গে রাজনীতি করে নানা সুবিধা পেয়ে এখন তিনি বিএনপির আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ার চেষ্টা করছেন। সেজন্য মিথ্যা মামলায় আমাদের আসামী করে বিএনপির কাছে বাহবাহ পাওয়ার আশা করছেন নামসর্বস্ব দলের কথিত নেতা মামলাটির বাদী বাবুল সর্দার চাখারী।
তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, আমি জাতীয়তাবাদী আদর্শে রাজনীতি করেছি। ২০২২ সালে আমাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হলেও আমি দল ছাড়িনি। কোনো রকম আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে আমাকে বহিষ্কার করে দেয়া হয়। শুনেছি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলাম সেই কারন দেখিয়ে বহিষ্কার করা হয়। অথচ দলের কোনো দায়িত্বশীল নেতা আমাকে নির্বাচনে দাঁড়াতে নিষেধ করেনি, ২০১১ সালে ভোটের ৭ ঘন্টা আগে দলের নির্দেশে সরে গিয়েছি, এই সিটি নির্বাচনে বললেও সরে দাঁড়াতাম। উল্টো গণমাধ্যমে দেখেছিলাম মহাসচিব বলেছিলেন যে, কেউ দলের বাহিরে গিয়ে ব্যক্তিগতভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে দল তাদেরকে বাধা দিবে না। কিন্তু আমাকে বহিষ্কার করে দেয়া হলো, তাও আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে। যদি আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হতো তাহলে আমাকে বহিষ্কারে যারা ষড়যন্ত্র করেছিল তাদের চেহারা উন্মোচিত হতো। বহিষ্কৃত অবস্থাতেও দলের সকল আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ছিলাম। জেলা ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের সকল কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের নিয়ে অংশগ্রহণ করেছিলাম। আমাকে বহিষ্কার করার পরেও নেতাকর্মীরা আমার প্রতি এতটাই আস্থাশীল ছিলো যে, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কমিটি গঠনের পর কমিটির বিরোধ সৃষ্টি হলে কমিটির অধিকাংশ নেতারা আমার কাছেই এসেছিলেন সমাধানের জন্য।
তিনি বলেন, ১৯৯৮ সালে রাজপথে আন্দোলন করতে গিয়ে গুলি খেয়েছি। শামীম ওসমানের সন্ত্রাসী বাহিনী সেদিন গুলি করলে আমি গুলিবিদ্ধ হই, আমার কর্মী ইব্রাহীম সেদিন সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়। আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করা হয়েছিল। আমার আইন পেশার চেম্বারে হামলা ভাংচুর করে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল। আমাকে চাষাড়া আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে বোমা হামলার ২২ মার্ডার মামলায় আসামী করা হয়েছিল। ১/১১ এর সময় বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষে আইনি সহায়তা দিতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগ করেছি। স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ সরকার আমলে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি আইনজীবী আন্দোলনের চেয়ারম্যান হয়ে আন্দোলন করেছি। রাজপথে আন্দোলন করতে গিয়ে ২০১১ সালে সদর থানা পুলিশের তৎকালীন ওসি আক্তার হোসেনের নেতৃত্বে এসআই আতিয়ার রহমান আমাকে বেদম লাঠিপেটা করেছিল। ২০১৩ সালে নিতাইগঞ্জ, মন্ডলপাড়া, খানপুর সহ বিভিন্ন স্থানে হরতাল অবরোধ পালন করতে গিয়ে আমি পুলিশের লাঠি পেটার শিকার হয়েছি। ২০১১ সালের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জয়ের সম্ভাবনা নিয়েও ভোটের মাত্র ৭ ঘন্টা আগে আমাকে নির্বাচন থেকে সরে যেতে বললে বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে নির্বাচন থেকে সরে গিয়েছি। ২০০৯ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি পদের দায়িত্ব পাই। কোনো দিন রাজপথ থেকে বিএনপির ব্যানার ছেড়ে দৌড়ে পালাইনি। পুলিশের মার খেয়েছি। নেত্রীর সকল নির্দেশ আদেশ পালন করেছি। আজকে সেই নেত্রীর গাড়িবহরে হামলা মামলায় আমাকে আসামী করা হলো? দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় মামলায় আসামী হওয়ার আগে আমার মৃত্যু হলেও ভালো ছিল।
তৈমূর আলম বলেন, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলাম। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেও আমি বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি করেছি। দেশে যখন গায়েবী মামলা হচ্ছিল, গণগ্রেপ্তার হচ্ছিল তখনো আমি আওয়ামীলীগ সরকারের এসব কর্মকাণ্ডের বিরোধীতা করেছি। গণগ্রেপ্তার বন্ধের দাবি করেছি।
তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আইন পুলিশ কোর্ট ব্যবহার করে ক্ষেত্রবিশেষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কিছু নির্দোষ ব্যক্তিদেরও আসামী করা হচ্ছে। কিন্তু আমি প্রকৃত দোষীদের শাস্তি চাই। সকলকে মনে রাখতে হবে যে, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকারের গায়েবী মামলার কারনেই ৫ আগস্ট স্বাধীনতার সৃষ্টি হয়েছে। আইন আদালতকে ব্যবহার করে গায়েবী মামলার সংস্কৃতি পুন:প্রবর্তন স্বৈরাচারের দ্বার পুন:উন্মোচিত হবে।