এনগঞ্জনিউজএক্সপ্রেস২৪ :
দীর্ঘ সমস্যা, রোগীদের সেবার মানের অবনতি, ডাক্তারদের সংকট, ঔষধের বিশাল পরিমানের সংকটময় অবস্থায় চলছে হাসপাতাল। হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান প্রায় বছর খানিক আগে ভাল মানের হলেও বর্তমানে নানা সমস্যার মধ্যে ধুকে ধুকে চলছে চিকিৎসা সেবা। বিভিন্ন এলাকা থেকে শত টাকা খরচ করে রোগীরা আসলেও মিলছে না তেমন কোনো সেবা। প্রতিদিন সকাল- দুপুর ১ টা পর্যন্ত ৬/৭ শত রোগী আসলেও ডাক্তারদের সেবার মান নিম্নমুখি। রোগীরা টিকেট কেটে ডাক্তারদের রুমে গেলেও তাদের খুঁজে পেতে কষ্ট হয়। রোগীদের জরুরী বিভাগে পাঠিয়ে দেয়া হয় বলে একাধিক রোগী জানান।
সরজমিন ঘুরে দেখা মিলে, নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীরা এসে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে একাধিক রোগী অভিযোগ করেন। রোগীদের অভিযোগ হাসপাতালে এসে ডাক্তার দেখালেও ওষুধ পাওয়া যায় না। ডাক্তারা বলে দেন বাইরে থেকে ওষুধ কিনে নিতে। এভাবেই চলছে মাসের পর মাস। বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গড়ে প্রতিদিন বর্হিবিভাগে ৬/৭ শতাধিক ও জরুরী বিভাগে শতাধিক রোগী আসে। বন্দর উপজেলায় সব চেয়ে বেশী শ্বাসকষ্ট জনিত রোগীর সংখ্যা বেশী হয় বলে ডাক্তাররা জানান।
জানা গেছে, নারায়নগঞ্জ জেলার সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বন্দর উপজেলা এলাকা। প্রায় ৫৬ কিলোমিটার এলাকার উপজেলায় মানুষ বসবাস করে প্রায় ৮/১০ লাখ। ৫৬ কিলোমিটারের ছোট একটি উপজেলার দক্ষিণাঞ্চল-উত্তরাঞ্চলে ছোট বড় প্রায় শতাধিক শিল্প কারখানা, ৫২ টি ইটভাটাসহ সার্বিক অবস্থায় বায়ু, কাঁলো বিষক্ত ধোয়া, পরিবেশ ও শব্দ দূষণের ফলে দেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলা হিসেবে সনাক্ত বন্দর। জনজীবন চরম হুমকির মুখে। যার কারনে অন্য উপজেলার তুলনায় বন্দরে মানুষের রোগ বেশি, ফসলাধি উৎপাদন নেই বললেই চলে।মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপন চরম হুমকির মুখে। বন্দর উপজেলার ৫ টি ইউনিয়ন ও ৯ টি সিটির ওর্য়াডে মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপন দূর্বিষ হয়ে পড়ছে। পরিবেশের ভারসাম্য হীনতায় চরম ঝুঁকির মধ্যে মানুষ বসবাস করছে। অপরিকল্পিত ভাবে মিল কারখানা, তুলার কারখানা, ইটভাটাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পানি শীতলক্ষা নদীর পানিকে বিষাক্ত করে তুলেছে। দেশের ৪৯৪ টি উপজেলার মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ বন্দর।
ইটভাটা, সিমেন্ট ও ব্যটারী তৈরীর কারখানা। যার বিষাক্ত ধোঁয়া ও ধুলায় বাতাসের পরিবেশ মারাত্বকভাবে ক্ষতিকারক। এ সকল অঞ্চলের মানুষ সব চেয়ে বেশী শ্বাসকষ্ট ও চর্ম রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আর এজন্য বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ সংক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশী হচ্ছে।
লক্ষণখোলা থেকে আসা রোগী আলী আহাম্মদ জানান, তিনি শ্বাসকষ্ট রোগে ভুগছেন। তিনি ডাক্তারের কাছে এলে তাকে শুধু মাত্র ৫টি প্যরাসিটামল দিয়ে বিদায় করেন। বাকি ওষুধ বাইরে থেকে কিনে খেতে বলেন। আমি গরীব মানুষ বাইরে থেকে ওধুষ কিনে খাওয়ার মত সামর্থ নেই। তাই বার বার হাসতাপালে আসতে হয়। মদনগঞ্জ থেকে রোগী তাসলিমা জানান, আমি কয়েক মাস ধরে ঘুরছি ডায়াবেটিকের ওষুধের জন্য। ডাক্তারা বলেন ডায়াবেটিকের ওষুধ নেই। ডায়রিয়া রোগী সুলতান মিয়া জানান, খাওয়ার স্যালাই ২টি দিলেও বাকিগুলি বাইরে থেকে আনতে হয়েছে। আর শরীরে পুশ করার স্যালাইন হাসপাতাল থেকে ১টি দিলেও বাকি সবকটি বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে হাসপাতালের ফার্মেসীতে যোগাযোগ করলে ফার্মাসিষ্ট বলেন আমাদের এখানে ওধুষ অনেক কম আবার অনেক ওষুধ নেই। যা আরএমও বলতে পারবেন। এ ব্যপারে বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মাঈনুল ইসলাম বলেন, আমাদের ওষুধ সংকট রয়েছে। যা আছে তা দিয়েই রোগীদের সামাল দিতে হচ্ছে। আমরা রোগীদের পর্যপ্ত ওষুধ দিতে পারছিনা। আমরা চাহিদা পাঠিয়েছি কিন্তু এখনো ওষুধ আসেনি। আমাদের হাসপাতালে রোগীদের চাহিদা অনুযায়ী যে সকল ওষুধ প্রয়োজন তার মধ্যে ফেক্সফেনাডিন, রসুভা, লোসার্ট, মেটফরমিন, গিলিক্সালিড, ইউনিগাল ক্রিম, পেরোজা ক্রিম, ডমপিরিডন, কেটরোলাক, এমবক্স সিরাপ, এনটাসিড সিরাপ, বি কমপ্লেক্স, সিপ্রো আই, অ্যালবেন, বেকলু নামক ওষুধ স্টকে নেই। এসকল ওসুধ থেকে রোগীরা বঞ্চিত। যা আছে তা আবার অনেক কম। আমরা রোগীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেও প্রয়োজনী ওষুধ দিতে পারছিনা স্টকে ওষুধ না থাকার কারনে। আমাদের ২০টি আইটেমের ওষুধ থাকলেও তা অনেক কম থাকায় তা দিয়ে রোগী সামাল দিতে হচ্ছে। ওষুধ যা আসে তা দিয়ে আমাদের বছর পার করতে হয়। তবে রোগীর সংখ্যা অনুযায়ী আমাদের হাসপাতালে যে সকল ওসুধ নেই তা পূরনসহ যে সকল ওধুধের সংকট রয়েছে তা পূরনসহ ওধুষ আরো বৃদ্ধি করা হলে রোগীদের চাহিদা মিটানো সম্ভব হবে। নয়তো রোগীদের এ অভিযোগ থেকেই যাবে। আমাদের ডাক্তারা চিকিৎসা সেবা দিলেও ওষুধ দিতে পারছিনা। ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার মান নিশ্চিত করতে জেলা সিভিল সার্জনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।