মসজিদ মুসলমানদের প্রাণকেন্দ্র। ইসলামে এর গুরুত্ব অপরিসীম। মুসলমানরা যেখানেই নিজেদের বাসস্থান গড়ে তোলে সেখানেই তৈরি করে এক বা একাধিক মসজিদ। আর এই মসজিদ ঘিরেই আবর্তিত হয় মৌলিক ইসলাম চর্চা। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আমাদের দেশে এখনও রয়েছে অসংখ্য পুরোনো ঐতিহাসিক মসজিদ। যার মধ্যে প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত বরিশালের কসবা আল্লাহর মসজিদও একটি। বরিশাল জেলাধীন গৌরনদী উপজেলার বড় কসবা গ্রামে অর্থাৎ বর্তমান গৌরনদী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে এ প্রাচীন মসজিদটি অবস্থিত।
এ মসজিদ নির্মাণের সঠিক তারিখ সংযুক্ত কোনো শিলালিপি পাওয়া যায়নি। তবে জনশ্রুতি আছে, সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে এই জঙ্গলকে চাষাবাদের উপযোগী করার জন্য এক দল লোক জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করার সময় এ মসজিদটির সন্ধান পায়। মসজিদের কোনো প্রতিষ্ঠাতা বা নির্মাণকারীর সন্ধান না পেয়ে তখন ওই এলাকার মুসলমানরা এর নাম রাখে ‘আল্লাহর মসজিদ’। কেউ কেউ এটাও বলেন যে, সাবহি খান নামক এক ব্যক্তি ষোল শতকের প্রথমদিকে মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। তবে ইতিহাসে নির্মাতার আর কোনো পরিচয় পাওয়া যায় না।
মসজিদটির গঠনশৈলী দেখলে তৎকালীন অনুন্নত বঙ্গের মুসলিম শাসক আর নির্মাতাদের অসাধারণ নির্মাণ কৌশল আর সূক্ষ্ম রুচি ও চিন্তাধারায় বিস্মিত হতে হয়। কসবা মসজিদের ভূমি-নকশা, অভ্যন্তরীণ বিন্যাস, ছাদের গম্বুজের অবস্থান, প্রবেশ দরজার অবস্থান ও অলংকরণ, চারকোণের বুরুজ ইত্যাদি দেখলে একে বাগেরহাটের খান জাহান নির্মিত ষাট গম্বুজ মসজিদ এবং খুলনার মসজিদকুঁড় মসজিদের মতোই বলে মনে হবে। খান জাহানি স্থাপত্যরীতির সঙ্গে এত ঘনিষ্ঠ মিল থাকায় মনে করা হয় যে, খান জাহান আলী কর্তৃক এ অঞ্চল মুসলিম অধিকারে আসার পর পনেরো শতকের মাঝামাঝি সময়ে কসবা মসজিদ নির্মিত হয়েছিল। মসজিদটির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ১১.৬৮ মিটার অর্থাৎ ৩৮ ফুট করে। বরিশালের গৌরনদী পৌর এলাকার বড় কসবা এলাকায় অবস্থিত নয় গম্বুজবিশিষ্ট এই ঐতিহ্যবাহী ‘আল্লাহর মসজিদ’। মসজিদটির ছাদের ওপরে তিন সারিতে মোট নয়টি গম্বুজ রয়েছে। প্রতিটি গম্বুজ চারটি পাথরের স্তম্ভের ওপর ভর করে দণ্ডায়মান। মনে করা হয় স্তম্ভগুলো আগ্নেয় শিলাজাত ব্যাসল্ট কিংবা ডলেরাইট পাথর দিয়ে নির্মিত।