এনগঞ্জনিউজএক্সপ্রেস২৪ :
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাচলের লেকে পাওয়া সাত টুকরো মরদেহটি ব্যবসায়ী জসিমউদ্দিন মাসুমের বলে জানিয়েছে পুলিশ৷ এদিকে শিল্পপতি জসীম হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে রুমা (৩৭) নামের এক কথিত প্রমিকাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অবৈধ সম্পর্কের কারনে শিল্পপতি জসীমকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার। এর আগে শিল্পপতি মাসুম গত ১০ নভেম্বর রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসা থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন৷ গত ১৩ নভেম্বর দুপুরে পূর্বাচল উপশহরের একটি লেক থেকে তিনটি পলিথিন ব্যাগে মোড়ানো সাত টুকরো লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
৬৫ বছর বয়সী এ ব্যবসায়ী ফতুল্লার চাঁদ ডাইং কারখানার মালিক৷ তিনি পশ্চিম সস্তাপুর এলাকার মসজিদ কমিটির সভাপতি। রাজধানীর বাসা থেকে কারখানায় যাবার উদ্দেশ্যে বেরিয়েছিলেন৷ রাতে বাসায় না ফেরায় ১১ নভেম্বর গুলশান থানায় তার নিখোঁজের একটি সাধারণ ডায়েরিও করা হয় বলে জানান তার পরিবারের সদস্যরা৷
নিহতের ছেলে সাইফুল ইসলাম সিহাব বলেন, গতরাতে পুলিশের মাধ্যমে খবর পেয়ে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে লাশ দেখে শনাক্ত করেন তারা৷
“রোববার বিকেলে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বের হইছিলেন৷ গুলশানে গাড়িটি ছেড়ে দেন এবং অন্য আরেকটি গাড়িতে নারায়ণগঞ্জ যাবেন বলে ড্রাইভারকে জানান৷ এরপর রাত সাড়ে এগারোটাও মায়ের সাথে ফোনে বাবার কথা হয়৷ কিন্তু তিনি আর রাতে ফেরেননি৷ সকাল সাতটার দিকে তার দু’টো নম্বরে কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়৷ কোথাও তার খোঁজ না পেয়ে আমরা থানায় জিডি করি৷ গতকাল বাবার টুকরো লাশের খবর পেয়ে আমার তো মাথায় আসমান ভাইঙা পড়ে৷”
কারও সাথে জসিমউদ্দিনের ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক সূত্রে শত্রুতা ছিল কিনা তা নিশ্চিত নন তার ছেলে সিহাব৷
তিনি বলেন, “বাবার সাথে কারও দ্বন্দ্ব ছিল কিনা জানি না৷ কেন তাকে এমন নির্মমভাবে হত্যা করা হলো তার কোনো রহস্য খুঁজে পাচ্ছি না৷”
নারায়ণগঞ্জে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ (অপরাধ) আব্দুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, “এই ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে৷ পুলিশ কিছু ক্লু পেয়েছে, হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালাচ্ছে৷”
বুধবার দুপুরে কুড়িল-কাঞ্চন সড়কের উত্তর পাশে পূর্বাচলের ৫ নম্বর সেক্টরের একটি লেক থেকে লাশের খন্ডাংশগুলো উদ্ধার করা হয় বলে জানান রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী।
একটি সূত্র জানিয়েছে, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। একাধিক ব্যক্তি এই হত্যায় জড়িত। ঢাকায় কোনো একটি বাসায় হত্যার পর তাঁর মরদেহ রূপগঞ্জে নিয়ে ফেলা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের মধ্যে একজন নারী থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বুধবার রাতে সন্দেহভাজন কয়েকজনকে গ্রেপ্তারে বেশ কয়েকটি জায়গায় অভিযানও চালিয়েছে পুলিশ।
স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সকালে কাঞ্চন-কুড়িল সড়কের পাশে লেকের পানিতে হাত ধোয়ার সময় দুর্গন্ধ পান স্থানীয় এক রিকশাচালক। পরে তিনি স্থানীয় আরও কয়েকজনকে ডাক দিলে পলিথিনে মোড়ানো ব্যাগগুলো পান তারা। খবর পেয়ে পুলিশ এসে কালো রঙের তিনটি পৃথক পলিথিন ব্যাগে মরদেহের খন্ডাংশগুলো উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়।
বুধবার ওসি লিয়াকত বলেন, ‘ওই যুবক অন্তত তিনদিন আগে মারা গেছেন বলে ধারণা করছি। হত্যার পর তার দেহের বিভিন্ন অংশ কেটে টুকরো করে পলিথিন ব্যাগে ভরে লেকে ফেলে দেওয়া হয়। তার শরীরের দু’টো অংশ এখনো পাওয়া যায়নি। আমরা যথাসম্ভব খুঁজেও পাইনি।